ভাষাহীনদের ভাষা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই মুখর সময়ে আসুন জেনে নিই ভাষাহীনদের ভাষার সাতকাহন। যারা কথা বলতে পারে তাদের জন্য মনের ভাব প্রকাশ করা যত সহজ এবং সাবলীল, যারা কথা বলতে বা শুনতে পারে না তাদের জন্য বিষয়টি ঠিক ততই কঠিন। প্রশ্ন জাগে, তাই বলে কি তারা মনের ভাব প্রকাশ করে না? অবশ্যই করে। তারা কয়েকটি বিশেষ সাংকেতিক ভাষায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে।  বিশ্বজুড়ে মূক ও বধিরদের জন্য 'ইশারা ভাষা' রয়েছে। সাম্প্রতিককালে মুখের ভাষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইশারা ভাষাও ব্যাপক উন্নত হয়েছে। এ ইশারা ভাষার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস।
পশ্চিমা দুনিয়ায় ষোড়শ শতকের শেষদিকে ইশারা ভাষার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। ১৭৫৫ সালে অ্যাবে ডিআইএপি বধিরদের জন্য প্রথম স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রান্সের প্যারিসে। এ স্কুলেরই একজন স্বনামধন্য গ্রাজুয়েট হলেন লরেন্ট ক্লার্ক। তিনি পরে থমাস হপকিন্স গ্যালাওডেটের সঙ্গে আমেরিকায় আসেন এবং সেখানে 'আমেরিকান স্কুল ফর ডেফ' প্রতিষ্ঠা করেন। ওই স্কুলটিই র্বতমানে গ্যালাওডেট বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত এবং এটিই বধিরদের জন্য একমাত্র মুক্তকলা বিশ্ববিদ্যালয়। কথা ভাষার মতো ইশারা ভাষারও রয়েছে আঞ্চলিক রূপ।

যেমন_ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকান ইশারা ভাষার (এএসএল) বিভিন্নরকম ব্যবহার দেখা যায়। একইভাবে ব্রিটিশ ইশারা ভাষারও (বিএসএল) রয়েছে কয়েকটি রূপ। নিকারাগুয়ার বধির স্কুলের শিশুরা যে ইশারা ভাষা উদ্ভাবন করেছে তা অন্যসব ভাষার মতোই প্রায় একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষা। ইশারাভাষাগুলোর নিজস্ব ব্যাকরণও রয়েছে। ইশারা ভাষা ব্যবহার করে যে কোনো বিষয়ই বোঝানো সম্ভব। চিত্রনির্ভর লিখিত রূপও রয়েছে এসব ইশারা ভাষার। ১৯৬৫ সালে উইলিয়াম স্টোকি আমেরিকান ভাষার একটি অভিধান প্রণয়ন করেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো_ ইশারা ভাষায় এখন রচিত হচ্ছে ইশারা কবিতা। একজন ইশারা কবি যত চমৎকারভাবে কোনো একটি বিষয় ইশারায় উপস্থাপন করতে পারবেন, অনেক মুখর কবিও হয়তো ভাষার সাহায্যে তা পারবেন না। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, মূক ও বধিররাও এখন ইচ্ছা করলে বহু ভাষাবিদ হতে পারবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, ইশারা ভাষা ব্যবহারকারী চাইলে একাধিক ইশারা ভাষায় পারদর্শী হতে পারে।
বাংলাদেশেও রয়েছে ঐরকম নানা প্রতিষ্ঠান এবং নানা টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রচারের সময় মূক ও বধিরদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় সাংকেতিক ভাষায় সংবাদ পাঠ করে থাকে। মানুষের বুদ্ধি আর চেষ্ঠায় কী না সম্ভব, এটা তার অন্যতম উদাহরণ।

0 comments: