বর্ণ



তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে সব ভাষার অন্তর্ভুক্তিকরণ, একটি একক মডেলের মাঝে রেখে এর নিয়ন্ত্রণ - এসব কারণে সব ভাষার বর্ণমালা নিয়েই নতুন করে অনেককিছু ভাবতে হচ্ছে

আমাদের বাংলা বর্ণমালা নিয়ে আমরা যত না ভাবছি তারচেয়ে বেশি ভাবছে প্রযুক্তির দিক থেকে যারা এখন দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে তারা যেই মাধ্যমে এখন আমি বাংলায় লিখছি তাও এমন এক সংস্থার করা যাদের সাথে বাংলার কোনো সম্পর্কই থাকার কথা না বিশ্ব মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা বা এর আড়ালে ব্যবসাকেন্দ্রিক যে মানসিকতাই থাকুক না কেন - বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতেই হবে

আমার হিসেবে বাংলা বর্ণমালা হলো পৃথিবীর জটিলতম বর্ণমালার একটি এর বর্ণের প্রাচুর্যতা, উচ্চারণের ভিন্নতা, রূপের পার্থক্য এত বেশি যে খোদ একজন বাঙালির পক্ষেও এই বর্ণমালা নিয়ে কাজ করা এক ধরনের চ্যালেঞ্জের ব্যাপার সেজন্যেই হয়তো এই বর্ণমালা নিয়ে কাজ করা লোকের সংখ্যা অনেক কম

উপরে প্রদর্শিত গবেষণা পত্রটি আমার এমএফএ কোর্সের অভিসন্দর্ভ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল এখানে আমি চেষ্টা করেছিলাম বাংলা বর্ণমালা নিয়ে ভাবনা চিন্তার সমসাময়িক ধারার কিছু দিক তুলে ধরার
প্রথমে দেখুন বাংলা অক্ষরগুলো একটানে বলতে পারেন কিনা না পারলে দেখুন নীচে-

স্বরবর্ণ (১১টি)                    : ,,,,,,,,,,
ব্যঞ্জনবর্ণ (৩৯টি)              : ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, ,,,,,,,ড়,ঢ়,য়,,,,

পূর্ণমাত্রাযুক্ত স্বরবর্ণ ৬টি, যথা   : ,,,,,
অর্ধমাত্রাযুক্ত স্বরবর্ণ ১টি, যথা   :
মাত্রা ছাড়া স্বরবর্ণ ৪টি, যথা    : ,,,

স্বরচিহ্ন (১০টি)                                    : ,ি,,,,,,,,

পূর্ণমাত্রাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ ২৬টি, যথা     : ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,ড়,ঢ়,য়
অর্ধমাত্রাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ ৭টি, যথা : ,,,,,,
মাত্রা ছাড়া ব্যঞ্জনবর্ণ ৬টি, যথা  : ,,,,,

অংক (১০টি)                                        : ,,,,,,,,,


স্বর সম্পর্কে আলোচনা

স্বর , সংজ্ঞা স্বর , অর্থ স্বর - স্বর [ sbara ] বি . 1 কণ্ঠধ্বনি ; 2 সংগীতে সুর ; 3 শব্দ ( কলস্বরে ) ; 4 যে ধ্বনির উচ্চারণে কণ্ঠের মধ্যে কোথাও বাধার সৃষ্টি হয় না ; 5 ( বেদমন্ত্রের উচ্চারণে ) উদাত্ত , অনুদাত্ত স্বরিত-এই ত্রিবিধ ধ্বনি ; 6 ( সং . ব্যাক . ) হ্রস্ব , দীর্ঘ প্লুত-এই ত্রিবিধ ধ্বনি [ সং . √ স্বৃ ( শব্দ করা অর্থে ) + ] ̃ গ্রাম বি . সংগীতে সুরসপ্তক অর্থাত্ ষড়্জ ঋষভ গান্ধার মধ্যম পঞ্চম ধৈবত নিষাদ ̃ বর্ণ বি . : স্বয়ং এবং অবাধে উচ্চারিত এই বর্ণসমূহ ̃ ভক্তি বি . ( ভাষা . ) বিপ্রকর্ষ দ্র ̃ ভঙ্গ বি . 1 কণ্ঠস্বরের বিকৃতিরূপ রোগ ; 2 সাত্ত্বিক ভাববিশেষ ̃ লহরি বি . সুরের ঢেউ ̃ লিপি বি . ( সংগীতে ) সুর তাল প্রভৃতির সাংকেতিক বর্ণনা-সংবলিত লিপি ̃ সংগতি বি . 1 ( ধ্বনিতত্ত্বে ) পাশাপাশি অবস্হিত দুটি অসম স্বরধ্বনির কাছাকাছি চলে আসা ( যেমন বিলাতি > বিলেতি , বিলিতি ) ; 2 সংগীতে ঐকতান ̃ সন্ধি বি . স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির বা স্বরান্ত পদের সঙ্গে স্বরাদি পদের সংযোগ স্বরাগম বি . দুই ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যে স্বরধ্বনির আগম-যথা বর্ণ > বরন
আমরা যদি বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ করি তা হলে দেখব স্বরবর্ণের সাথে কখনই কার কিংবা ফলা (এর মূল রূপ বজায় রেখে) হয়না যেমন: একটি স্বরবর্ণ এটিকে ইচ্ছে করলেই + কার বা ফলা সমেত লেখা যাবেনা
কিন্তু ব্যাঞ্জনবর্ণের সাথে যাবে যেমন: এবং ব্যাঞ্জনবর্ণ এদেরকে + কার= য়ি বা + ফলা=য়্য এবং + কার=হি বা + ফলা= হ্য লেখা যায়
অনু-স্বর, অনু-স্বার , সংজ্ঞা অনু-স্বর, অনু-স্বার , অর্থ অনু-স্বর, অনু-স্বার - অনু-স্বর , অনু-স্বার [ anu-sbara , anu-sbāra ] বি . স্বরবর্ণের পরে বসে এমন অনুনাসিক বর্ণবিশেষ , '' [ সং . অনু + √ স্বৃ + , অনু + √ স্বৃ + ]


দাহিনা-স্বর
বাযাঁ-স্বর
মধ্য-স্বর
গ্রহ
সূর্য
চন্দ্র
রাহু
নাড়ী
পিংগলা
 ইড়া
সুষুম্ণা
প্রকৃতি
উগ্র
সৌম্য
মিশ্রিত
ধাতু
পিত্ত
কফ
 বাযু
লিংগ
 পুরুষ
 স্ত্রী
নপুংসক
দেবতা
শিব
শক্তি
  অর্দ্ধ-নারীশ্বর
বর্ণ
কৃষ্ণ
গৌর
মিশ্রিত যা ধূম্র
কাল
দিবস
 রাত্রি
সন্ধ্যা
প্রবল তত্ত্ব
অগ্নি, বাযু
জল, পৃথ্বী
 আকাশ
সংজ্ঞা
 চর
স্থির
দ্বি-স্বভাব
বার
রবি, মংগল 
সোম, বুধ
বুধ (যা গুরু)
পক্ষ
কৃষ্ণ
শুক্ল
*
তিথি
 কৃষ্ণ পক্ষ-,,,,,,১৩,১৪,৩০
শুক্ল পক্ষ-,,,১০,১১,১২
শুক্ল পক্ষ-,,,,,,১৩,১৪,১৫
কৃষ্ণ পক্ষ-,,,১০,১১,১২
*
মাস
বৈশাখ, শ্রাবণ, কার্তিক, মাঘ
জ্যেষ্ঠ, ভাদ্রপদ, মার্গশীর্ষ, ফাল্গুন, বৃষভ, কর্ক, কন্যা, বৃশ্চিক, মকর, মীন
আষাঢ়, আশ্বিন, পৌষ, চৈত্র
সংক্রান্তি
মেষ, মিথুন, সিংহ, তুলা, ধনু, কুম্ভ
বৃষভ, কর্ক, কন্যা, বৃশ্চিক, মকর, মীন
*
রাশি
, , , ১০
, , , ১১
, , , ১২
নক্ষত্র
অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, উত্তরাষাঢ়, অভিজিত্, শ্রবণ, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, রেবতী, পূর্বাভাদ্রপদ, রোহিণী
আশ্লেষা, মঘা, পূর্বা-ফাল্গুনী, হস্ত, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, মূল, পূর্বাষাঢ়া, জ্যেষ্ঠা
মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্য
সংখ্যা
বিষম
সম
শূন্য
স্থিতি
নীচে, পীছে, দাহিনে
ঊপর, বাএঁ, সামনে
*
দিশা
 পূর্ব, উত্তর
পশ্চিম, দক্ষিণ
কোণ

স্বর:
জীবজন্তু প্রভৃতির কন্ঠ হতে এবং কোন পদার্থের আঘাতে যে একপ্রকার শব্দ বা আওয়াজ (ধ্বনি) নির্গত হয় তাকে স্বর বলে কিন্তু, সেই স্বর যখন সঙ্গীত উপযোগী হয় বা সেই স্বর শ্রবণে চিত্ত প্রসন্ন হয় তখন তাকে প্রকৃত সঙ্গীতের স্বর বলে

সুর:
বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রাদি হতে নির্গত ধ্বনিকে সাধারনভাবে সুর বলা হয় যেমন: বাঁশীর সুর, হারমোনিয়ামের সুর, বীণার সুর, তানপুরার সুর, এসরাজের সুর ইত্যাদি অনেকে চলতি কথায় শাস্ত্রীয় রাগগুলিকেও সুর
বলে থাকেন যেমন: বিলাবল সুর, ভৈরবী সুর, ইমন সুর, বেহাগ সুর ইত্যাদি

সঙ্গীতে স্বর -এর প্রয়োজনীয়তা:
বাংলা, ইংরেজী বা যে কোন বিদ্যা শিখতে হলে কতকগুলি বর্ণ বা অক্ষরের সাথে প্রথমে পরিচিত হতে হয় পরে, একাধিক বর্ণ বা অক্ষরের সংযোগে এক-একটি অর্থবোধক শব্দ এবং কয়েকটি শব্দের সংযোগে এক-একটি অর্থবোধক বাক্যের সৃষ্টি হয়, সঙ্গীত বিদ্যাতেও তেমনি কতকগুলি স্বর ব্যবহৃত হয় এবং পরে স্বর হতে সপ্তক, সপ্তক হতে ঠাট, ঠাট হতে রাগের সৃষ্টি হয় অতএব, বিদ্যা বা ভাষায় যেমন বর্ণ বা অক্ষরের প্রয়োজন, সঙ্গীতেও ঠিক তেমনি স্বরের প্রয়োজন অপরিসীম

স্বরগুলির শাস্ত্রীয় নামগুলি নিম্নে প্রদান করা হলো:
সা - ষড়জ / খরজ
রে - ঋষভ / রেখাব
গা - গান্ধার
মা - মধ্যম
পা - পঞ্চম
ধা - ধৈবৎ
নি - নিষাদ / নিখাদ


স্বর কয়টি কি কি ? স্বর -এর শ্রেনীবিভাগসমূহ বর্ণনা:
বাংলা ভাষায় যেমন ১২ টি স্বরবর্ণ ৪৮ টি ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজিতে ২৬ টি বর্ণ বা অক্ষর আরবীতে ৩০ টি হরফ আছে, তেমনি সঙ্গীতেও সর্বমোট ১২ টি স্বর আছে বাংলা ভাষায় যেমন স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ইংরেজী ভাষায় (ঠড়বিষ ঈড়হংড়হধহঃ) অর্থাৎ দুই জাতীয় বর্ণ বা অক্ষর আছে, সঙ্গীতের স্বরগুলির মধ্যেও তেমনি প্রকারভেদ আছে সঙ্গীতের এই ১২ টি স্বরকে ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে () শুদ্ধ স্বর () বিকৃত স্বর

শুদ্ধস্বর বিকৃতস্বর:
() কোন একটি নির্দিষ্ট সুরকে সা ধরে, সা থেকে রে, রে হতে গা, মা হতে পা, পা হতে ধা এবং ধা হতে নি স্বরগুলি পূর্ণান্তরে (একটি বাদে একটি রূপে) অবস্থিত হলে, সেই স্বরগুলি হয় শুদ্ধ স্বর শুদ্ধ স্বরগুলি হলো টি, যথা: , , , , ,

() প্রতি দুটি স্বরের মধ্যে বাদ দেয়া অর্ধান্তরে অবস্থিত স্বরগুলি হয় বিকৃত স্বর কিন্তু গা মা এবং শুদ্ধ নি সা স্বর দুটি পাশাপাশি অর্ধান্তরে অবস্থিত বিকৃত স্বর টি, যথা: রে (), গা (জ্ঞ), মা (ক্ষ), ধা () নি () কিন্তু এই বিকৃত স্বর আবার দুই ভাগে বিভক্ত, যথা: () কোমল স্বর () কড়ি স্বর কোমল স্বর টি, যথা: , জ্ঞ, এবং কড়ি স্বর টি, সেটি হলো ক্ষ অর্থাৎ ক্ষা স্বরটিকে কড়ি বলতে হবে এবং বাকী টি স্বরকে কোমল বলতে হবে

0 comments: